১৫ নভে, ২০০৯

মোবাইল সমাচার


মনিরুল ইসলাম নাবিল

বর্তমানে আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি যন্ত্র হল মোবাইল বা সেল ফোন। প্রায় সবার হাতেই রয়েছে একটি করে সেলফোন। আর যাদের নেই তারাও ব্যবহার নিশ্চয়ই করেছেন। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি হাতের এই ছোট যন্ত্রটি কাজ করে কিভাবে? কেনই বা একে সেলফোন বলা হয়?

মোবাইল ফোনের ধারণা প্রথম আসে ১৯৪৭ সালের দিকে। তারপর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এটি পৌঁছেছে বর্তমান পর্যায়ে। মজার বিষয় হল আজ আমরা খুব সহজেই হাতের তালুতে যে যন্ত্রটি নিয়ে ঘুরছি, মাত্র ৩০ বছর আগেও তা একটা অফিসের পুরো একতলা ছাড়া জায়গা হত না। মোবাইল ফোন আসার আগে যাদের সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দরকার ছিল তাদের জন্য অন্য এক রকম ব্যবস্থা ছিল। তাদের গাড়িতে থাকত শক্তিশালী একরকম যন্ত্র। শহরের কোন উচু ভবনে থাকত একটি কেন্দ্রীয় এন্টেনা। সেই এন্টেনা থেকে শক্তিশালী তরঙ্গ শহরের সবদিকে পাঠানো হত। কিন্তু এই ব্যবস্থায় খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এ সুবিধা পেত।

আমাদের বর্তমান যুগে সেলুলার ফোন পদ্ধতিতে সমগ্র শহরকে কতগুলো ছোট ছোট অংশ বা কোষে (সেল) ভাগ করা হয়। প্রতিটি অংশে আলাদা বেস স্টেশন ও এন্টেনা থাকে। এসব এন্টেনা থেকে খুব দুর্বল তরঙ্গ চারদিকে এমনভাবে পাঠানো হয় যেন তা ঐ সেলের বেশি বাইরে যেতে না পারে। ফলে একই চ্যানেল দূরের অন্য কোন সেলেও ব্যবহার সম্ভব হয়। আর তাই একসাথে অনেক লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে অনায়াসে। পুরো শহরকে কোষের বা সেলের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হয় বলেই এই ফোনের নাম হয়েছে সেলফোন। প্রকৃতপক্ষে মোবাইল ফোন আর কিছুই না , একটি রেডিও। তবে খুব সূক্ষ্ণ ও দ্বিমুখী রেডিও।

ভালভাবে বোঝার জন্য ওয়াকি-টকির সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। ওয়াকি-টকিতে কথা বলার সময় একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। ফলে একবারে একজনের বেশি কথা বলতে পারে না।  একজন
কথা বললে অন্যজনকে শুনে যেতে হবে। কিন্তু মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয় ২ ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি। একটি বলার জন্য এবং অন্য ফ্রিকোয়েন্সি শোনার জন্য। আর তাই একইসাথে ২ জনই কথা বলতে পারে। একটি ওয়াকি-টকির মাত্র ১টি চ্যানেল (সংবাদ গমনের পথ) থাকে। আর মোবাইল ফোনের থাকে ১৬৬৪টি বা তারও বেশি সংখ্যক চ্যানেল।


এবার দেখা যাক যখন আমরা ফোন করি তখন ঠিক কি ঘটে। ফোন করার সাথে সাথে আমাদের সেলফোনটি যোগাযোগ করে সবচেয়ে কাছের ও শক্তিশালী সিগন্যাল সম্পন্ন বেস স্টেশনের সাথে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে পৌঁছে দেয় নিজের নাম্বার, ইলেকট্রনিক সিরিয়াল এবং যে নাম্বারে আপনি ডায়াল করতে চান সেই নাম্বারটি। বেস স্টেশনে এসব তথ্য যাচাই করা হয় এবং আপনি যদি সচল গ্রাহক হয়ে থাকেন তবেই বেস স্টেশন আপনার ফোনকে জানিয়ে দেবে নির্দিষ্ট চ্যানেলের কথা। বেস স্টেশনের ঐ চ্যানেল দিয়ে অন্য মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ স্থাপিত হয়। ফোন করার ক্ষেত্রে অনেক ফোন সিম কার্ড ব্যবহার করা হয়। এর মূল কাজ হল সংযোগ তথ্য ও পরিচিতি নাম্বার ধারণ করা।

এখন যেসব ফোন দেথা যায় তারা মূলত ২ ধরনেরঃ

১. এনালগ
২. ডিজিটাল

তবে আধুনিককালের অধিকাংশ ফোনই ডিজিটাল। এনালগ সেলফোনের সাথে ডিজিটাল সেলফোনের পার্থক্য এই যে ডিজিটাল ফোন কম জায়গায় প্রচুর তথ্য প্রেরণে সক্ষম। কিন্তু এনালগ ফোন তা পারে না। বাইনারী (১ এবং ০) পদ্ধতি ব্যবহারের ফলেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে এনালগের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ তথ্য বেশি পাঠানো যায়।

মোবাইল ফোন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে বিজ্ঞানীরা কিছুটা শঙ্কাগ্রস্থ। মোবাইল ফোন থেকে যে তেজস্ত্রিয় রশ্মি বের হয় তা মানুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর বলে তারা ধারণা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোন ক্ষতির নিশ্চিত সম্ভাবনা পাওয়া যায় নি, তবুও মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমাদের আরও সর্তক থাকতে হবে।

আমাদের আরও সর্তক থাকতে হবে। শারীরিক ক্ষতি সরাসরি না করলেও মোবাইলে অতিরিক্ত কথা বলা আমাদের অর্থ ও সময় দুটোই নষ্ট করে।



 তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট


(এই লেখাটি খবর-দার জানুয়ারি-মার্চ, ২০০৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল)


0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন