১৪ ডিসে, ২০০৯

ঔষধ সতর্কতা :: আমরা ঔষধ সম্পর্কে কতটুকু জানি?

নাজনীন আক্তার

 দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু খাওয়ার সাথে সাথে আমরা মুড়ির মত ঔষধও খাই। মুড়ির মত খাওয়া মানে হিসাবহীন ভাবে না জেনেই খাওয়া। একটু মাথাব্যাথা, সর্দি, কাশি, জ্বর? প্যারাসিটামল কোথায়? শরীর দুর্বল? ভিটামিন কোথায়? এভাবেই না জেনেই প্রতিনিয়ত আমরা প্রচুর ওষুধ খাচ্ছি। ভাত খাওয়ার মত ওষুধ খাওয়া এখন আমাদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর তাইতো প্রতিবছর ওষুধ কোম্পানীগুলো কোটি কোটি টাকা আয় করছে।


আমাদের দেশে বর্তমানে বেক্সিমকো, নাভানা, একমি, স্বয়ার, এ.সি.আই এর মত মোট ১০টি নামকরা কোম্পানির ওষুধ বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। অনেক সময় আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সামান্য শারীরিক সমস্যাতেই ওষুধ খাচ্ছি।  বর্তমানে এমন বাসা খুব কমই দেখা যায় যেখানে প্যারাসিটামল গ্রুপের অন্ততপক্ষে ১টি ওষুধও নেই। এই যে আমরা এত ওষুধ খাচ্ছি প্রতিনিয়ত, আমরা কি জানি কোন ওষুধ কেন দরকার, এটি খেলে আমাদের কতটুকু ভাল হবে বা পরবর্তীতে কতটুকু ক্ষতি হবে? আসুন, আমরা জেনে নেই আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ওষুধ কতটা দরকার এবং কোন ওষুধ কতটা কার্যকরী।

প্যারাসিট্যামল গ্রুপ:
এই  গ্রুপের ওষুধগুলো হচ্ছে নাপা, এইস্ ইত্যাদি যা বহু প্রচলিত। জানেন এই ঔষুধগুলোর কাজ কি? এই গ্রুপটি শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ জ্বরের জন্য দরকার হয় এবং মাথা ব্যাথার জন্যও ডাক্তাররা এটি খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমরা এসব লক্ষণ ছাড়াও সামান্য ব্যাথাতেই এই সব ওষুধগুলো খাই।


  আর এইসব ওষুধ খাওয়ার পর সাময়িক প্রশান্তি পেলেও পরে এইসব খাওয়ার ফলে হালকা সামান্য যেমন বমি বমি ভাব হয়। অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয় যকৃতে এবং কিডনিতে - যা পরবর্তীতে মানুষকে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিতে পারে।
পেইন কিলার গ্রুপঃ 
ডাইক্লোফেনিক গ্রুপটি হচ্ছে পেইন কিলারের জন্য একটি অন্যতম গ্রুপ। পেইন কিলার ওষুধগুলো ১২ বছরের উপরের বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। পেইন কিলার খেয়ে আমরা ব্যথা দূর করতে পারি কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে এটি শরীরে প্রথমে গ্যাস্ট্রিক এবং পরে তা আলসারে পরিণত করে। এছাড়াও পেইন কিলার খেলে একসময় বমি এবং গা-খিঁচুনির রোগ দেথা দেয়। পেইন কিলারের মধ্যে এসপিরিন গ্রুপকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগেই। কেননা এটি খেলে উপরোক্ত অসুখগুলো খুব দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধে। কিন্তু এখনও অনেক ওষুধের  দোকানে এদের পাওয়া যাচ্ছে।

গ্যাস্ট্রিক: 
গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য সবচেয়ে পরিচিত অ্যান্টাসিড। ওষুধটি খাওয়ার এক পর্যায়ে এটি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে সাহায্য করে। আসলে গ্যাস্ট্রিকের জন্য ব্যবহৃত যে কোন ওষুধই দীর্ঘদিন ব্যবহারের এক পর্যায়ে শরীরে এর কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে। আর তাই এই সব ওষুধ না খেয়ে যেসব খাবারের জন্য গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের সমস্যা হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিয়মিত সময়মত খাওয়ার অভ্যাস করাটাই হচ্ছে জরুরী।

 

 ভিটামিন এবং এন্টিবায়োটিক: 
আমরা ডাক্তারের কাছে গেলেই যাদি ওষুধ পেসক্রাইব করে তবে তাতে অবশ্যই অবশ্যই ১টি অথবা ২টি ভিটামিন থাকবেই। আর ভিটামিনের পরেই থাকে এন্টিবায়োটিক ওষুধের নাম। কিন্তু এন্টিবায়োটিকগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভয়ঙ্কর। যেমন কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যেগুলো গ্রহণ করলে দীর্ঘদিন ধরে মাথার চুল পরার সমস্যা দেখা দেয়। কিছু এন্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে চোখে কম দেখা বা ঘোলা দেখার সমস্যা, কানে কম শোনার সমস্যা ছাড়াও সারা শরীরের কোন না কোন অঙ্গের ভয়ানক ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া আমাদের দেশে ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়ার সময় এটি দেয়ার জন্য শরীরের উপর এক ধরণের পরীক্ষা আছে সেটি করে না। উন্নত দেশগুলোতে কোন কারণে রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেয়ার আগে তার শরীরকে ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, যে কারণে তাকে এটা দেয়া হবে তার উৎস কি এবং সেই শরীরের হরমোন এটি সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারবে কিনা। অর্থাৎ অনেক যাচাই -বাছাই করে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। আবার আমাদের দেশের ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষরা ভাবেন ভিটমিন বেশি খেলে ক্ষতি নেই তাই তারা অন্যান্য ওষুধের মত এটিও প্রচুর পরিমাণে খায়। কিন্তু এই ভিটামিন কাজ করে কিভাবে আমরা কি তা জানি? আমাদেরকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয় এবং সেই খাবারের পুষ্টিটার উপরই ভিটামিন কাজ
করে শরীরের বিভিন্ন এনজাইমের কাজে সাহায্য করে।

আবার শরীরে যে ভিটামিনের দরকার নেই সেটি গ্রহণ করলে আবার উল্টো ক্ষতি হয় যেমন ভিটামিন ডি এটি দেহে প্রয়োজন না হলেও খেলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া গর্ভবতী অবস্থায় মায়েদের বিভিন্ন ভিটামিন দেয়া এবং সেটারও একটা নির্দিষ্ট সময় এবং মাত্রা আছে আর শরীরের উপর ওষুধের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভরশীল।

তবে সব কথার শেষ কথা এটাই যে, পৃথিবীর প্রতিটি ঔষুধেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে । সেটা যত ভাল ঔষুধই হোক না কেন। তাই আমাদের উচিত প্রকৃতি থেকে যতটা পারা যায় পুষ্টি গ্রহণ করা; যেমন বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, গাজর, টমেটো, শশা ইত্যাদি খাওয়া। আর অনেক কম দামী ফলমূলও আছে যেগুলো প্রতিদিন খাবারের সাথে রাখা উচিত এবং যতটা পারা যায় চেষ্টা করা ওষুধ না খেয়ে সুস্থ থাকার নিয়ম-কানুন মেনে শরীরকে সুস্থ রাখা। বাজারে ভিটামিনগুলোর গায়ে এত সব আইটেমের কথা লেখা থাকে শুধু বিক্রয়ের জন্য। কারণ এইসব উপাদান সবগুলো থাকে না। কিন্তু আমরা এত নাম দেখে বিভ্রান্ত হই। আর তাই আসুন আর মুড়ির মত ওষুধ খাওয়ার বদভ্যাস দূর করি এবং শরীরকে সুস্থ রাখি, সচেতন হই।

তথ্যসূত্র : বৈজ্ঞানিক কুসংস্কার
[এই প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফামেসী বিভাগের শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা নেয়া হয়েছে।]




এই লেখাটি খবর-দারের মার্চ, 2008 সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলো।

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

very good

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন