১৭ ফেব, ২০১০

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল : আসল রহস্য

মনিরুল ইসলাম নাবিল

বার্মুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে আজও নানা জনের মুখে শোনা যায় নানা কাহিনী। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকের এই ছোট্ট ত্রিভুজাকৃতির অঞ্চলের ধারে কাছে ঘটে নানা রহস্যময় ঘটনা। কারও কালো চুল হয়ে যায় সাদা, কম্পাসের কাঁটা দিক হারিয়ে ঘুরতে থাকে বনবন করে। জাহাজ-প্লেন গেলে তার হদিসও পায় না মানুষ মাঝে মাঝেই। এইসব গা শিউরে ওঠা কৌতুহলোদ্দীপক কাহিনী প্রকাশিত হয় সবার সামনে যখন ১৯৭৫ সালে চার্লজ বার্লিৎজ, এক আমেরিকান লেখক প্রকাশ করেন জনপ্রিয় বই ‘বার্মুডা ট্রায়াঙ্গেল’।


অনেক অনুসন্ধিৎসু মনেরই প্রশ্ন আসে-“বিজ্ঞানীরা কি এসব রহস্যের কোন ব্যাখ্যা দিতে পেরেছেন?”। অনেকে আবার আগেই ভেবে বসে আছেন-“এসব ব্যাখ্যার বাইরে। তাই বিজ্ঞানীরা চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছেন।”। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। বইটি ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হবার পরই ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। অনেক বিজ্ঞানীর দৃষ্টিও পড়ে এসবের উপর। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৬-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চালানো হয় ব্যাপক অনুসন্ধান। এই অনুসন্ধান কর্মসূচীর নাম দেয়া হয় ‘পলিমোড প্রোগ্রাম’। অনুসন্ধানে যে সব তথ্য আসে তার কিছু নমুনা দেখলেই প্রকৃত ঘটনা বোঝা যাবে।




বইটির অতি উত্তেজক রহস্য কাহিনী হল ১৯৬৩ সালে দুটি ‘কেসি জেট স্ট্র্যাটোট্যাংকার বিমান’-এর রহস্যময় ভাবে অদৃশ্য হবার কাহিনী। লেখক লিখেছেন-“বিমান হঠাৎ নিখোঁজ হয় এবং অনুসন্ধানের পর বিমান দুটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয় ১০০ মাইল ব্যবধানে। কি করে এরা ধ্বংস হলো? সংঘর্ষে? তাহলে ধ্বংসাবশেষ এক জায়গায় কেন পাওয়া গেল না? কি সেই রহস্যময় কারণ?




অনুসন্ধানকারীরা বললেন সম্পূর্ণ উল্টো কথা। বিমান ঠিকই ধ্বংস হয়েছিল। তবে তারা উড়ছিল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়, তাও আবার পাশাপাশি এবং অলৌকিক ব্যাপার হল ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গিয়েছিল একই জায়গায়!
১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরের শান্ত শীতল দিনে উপকূল থেকে ১ মাইল দূরের ‘কেবিন ক্রুজার উইচক্র্যাফ্ট’ দুটি জাহাজ অদৃশ্য হয়। অলৌকিক ব্যাপার! শান্ত সমুদ্রে জাহাজ গেল কোথায়? নানা তথ্য ঘেটে অনুসন্ধানকারীরা জানতে পারলেন যে লেখক তার নিজস্ব প্রয়োজনেই সেদিনকার বিক্ষুদ্ধ সমুদ্রকে পরিণত করেছিলেন শান্ত সমুদ্রে! প্রকৃতপক্ষে জাহাজটির প্রপেলার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল আর নাবিকরাও বারবার সাহায্য আবেদন পাঠাচ্ছিলেন।


এরকম আরও চুল খাড়া করা সব রহস্যময় কাহিনীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এ বইয়ে। প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যায় লেখকের হাতের ছোঁয়ায় তথ্যগুলো সামান্য কাটছাঁট বা পরিবর্তন হয়ে অলৌকিক আর জটিল রহস্যময় কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কোথাও সামান্য মিথ্যা, কোথাও সত্যের অর্ধেক অংশ তুলে ধরার ফলেই এসব কাহিনী তার ব্যাখ্যা হারায়। আর বার্লিৎজ সাহেব সেই ফাঁকে যা লাভ করার তা করে ফেলেছেন।


আমাদের চারপাশেও এরকম নানা কাহিনী সমৃদ্ধ বই পাওয়া যায়। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিৎ যুক্তিবুদ্ধি আর প্রকৃত প্রমাণ ছাড়া এধরনের বই পড়ে প্রভাবিত না হওয়া।

তথ্য সংগ্রহঃ উৎস- অলৌকিক নয় লৌকিক (১ম খন্ড)


এই লেখাটি খবর-দার মার্চ 2010 সংখ্যায় প্রকাশিত

মনিরুল ইসলাম নাবিল

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন