হেয়ালি করতে ভালোবাসে
তারিদ। তাতেও যেন মজা আছে,আছে শেখার অনেক
কিছু। হঠাৎই সূফি বলে উঠল, যে তারিদের সবচেয়ে
ভালো বন্ধুদের মধ্যে একজন। সত্যতা স্বীকার করে টুম্পা বলে উঠলো,হ্যাঁ ঠিক তাই।
তারপর সেদিনের গল্পটা শুরু
করল টুম্পা। সামনে উপষ্থিত অনেকেই।
একদিন টুম্পা ও সূফি কি
নিয়ে যেন মন খারাপ করে বসে আছে? হঠাৎ ঘরে হেয়ালি গনিতজ্ঞ তারিদ ( বন্ধুরা দুষ্টুমি
করে এই নাম দিয়েছে) প্রবেশ করেছে। নি:শব্দে ওদের ঐ অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিজে কি
চিন্তা করতে করতে কিছুক্ষন পরে বলে উঠল,
পেয়েছি! ওদেরকে চমক ও গনিতের মজা দেখানোর রাস্তা দুইই পেয়েছি। সাতে মন
ভালোর ব্যাপার তো আছেই। এতক্ষন সব ঠিকঠাকই ছিল সূফি ও টুম্পার দুজনের কেউই তখনও
বুঝতে পারেনি যে তারিদ ঘরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারিদের উত্তেজনা তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি
করেছে। পরিস্থিতি সামলে নিয়ে সূফি ও টুম্পাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তারিদ বলল,
-একটা বই ও পেন্সিল নিয়ে আয় দেখি।
-একটা বই ও পেন্সিল নিয়ে আয় দেখি।
সূফি চট করে ওর পদার্থবিজ্ঞান বইটা আর সেই সঙ্গে একটা পেন্সিল নিয়ে আসল।
তারিদ অনেকটা বিজ্ঞের
মত পিছন দিক ফিরে চোখ বন্ধ করে বলল,
এই বইটার যেকোন পৃষ্ঠা
খুলে সেই পৃষ্ঠার প্রথম দশ (১০) লাইনের মধ্যে যেকোন লাইনের কাছে ছোট করে একটা দাগ
দে।
টুম্পা চটপট সূফির হাত
থেকে বইটা নিয়ে একটি পৃষ্ঠা খুলে তারপর পেন্সিল দিয়ে তারিদের কথামত সেই পৃষ্ঠার দশ
(১০) লাইনের মধ্যে একটা লাইন বেছে নিয়ে তার পাশে দাগ দিল।
তারিদ জিজ্ঞেস করল,
হয়েছে?
টুম্পা বলল, হ্যাঁ
হয়েছে।
-এবার যেই পৃষ্ঠা
খুলেছিস সেই পৃষ্ঠার সংখ্যাকে দশগুণ করে তার সঙ্গে ২৫ যোগ কর।
অঙ্কে কাচা টুম্পা মনে
মনে হিসেব করতে গিয়ে থেমে গেল। সূফি তখন মিটমিট করে হাসছিল। তারপর টুম্পা তাড়াতাড়ি
একাট কাগজ নিয়ে তাতে খস খস করে হিসেবটা করে ফেলল। আর তারিদকে দেখিয়ে বলল হয়েছে।
-এখন যা হলো এর সঙ্গে এ
পৃষ্ঠায় দাগ দেয়া লাইনের আগে যে কটা লাইন আছে সেই সংখ্যা যোগ দে।
-দিয়েছি।
-যা হলো তাকে দশ (১০)
দিয়ে গুণ কর।
-করেছি।
-এবার ঐ দাগ দেওয়া
লাইনের প্রথম দশটা শব্দের মধ্যে যেকোন একটা শব্দ বেছে নিয়ে তার নিচে দাগ দে। তারপর
ঐ শব্দের আগে যে কটা শব্দ আছে সেই সংখ্যাটা গুণফলের সংগে যোগ দে।
-দিয়েছি।
-কত হল বল?
-৩৪৮৮।
তারিদ মনে মনে হিসেব
কষে বলল,
তাহলে বত্রিশ পৃষ্ঠার
চতুর্থ লাইনের পাশে দাগ দিয়েছিস। আর ঐ লাইনের নবম শব্দের নিচে দাগ দিয়েছিস।
সূফি সঙ্গে সঙ্গে
টুম্পার হাতে ধরা বইটার উপর ঝুকে পড়ে দেখল তারিদ ঠিক বলল কিনা?
হ্যাঁ, তাইতো তারিদ
একেবারে ঠিক ঠিক বলে দিয়েছে। কিন্তু কি করে বলল? পুরো ঘটনাটাকে সূফি ও টুম্পার
স্বপ্নের মত মনে হল আর তারিদকে মন হল সেই স্বপ্নের জাদুকর বা রুপকার।
ওদের দু’জনেরই দারুণ
কৌতুহল। তারিদ কিভাবে করল এটা!! রহস্যটা কি জানতেই হয়?
কি আপনারও নিশ্চয় জানতে
ইচ্ছে হচ্ছে, কায়দাটা কি?
আচ্ছা, আবার তাহলে
টুম্পার গল্পে ফিরে যাই।
এতক্ষন তারিদ কিছু বলার
আগেই সূফি আর টুম্পা বলে উঠল, ঠিক ঠিক মিলে গেছে তারিদ। কিন্তু কেমন করে করলি
তারিদ, আমাদের একটু শিখিয়ে দে’না।
ভাব নিয়ে অনেকটা
জ্ঞানীর মত করে বলল, আমাকে যে উত্তরটা জানালি ৩৪৮৮, আমি তার থেকে আড়াইশো (২৫০)
বিয়োগ করে বললাম ৩২৩৮। আর তা থেকেই কোন পৃষ্ঠার কোন লাইনের কোন শব্দ বলে দিতে
পারলাম।
সূফি ও টুম্পা
ব্যাপারটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করল। প্রথম দুই অংক মিলে বত্রিশ সেটাই পৃষ্ঠার
নম্বর। তারপর আছে তিন, তিনের পরবর্তী সংখ্যা চার আর সেটাই লাইনের নম্বর। মানে
চতুর্থ লাইন। একইভাবে সবশেষের অংকটা থেকে
কোন শব্দ সেটা পাওয়া গেল। আটের পরবর্তী সংখ্যা নয়, কাজেই নবম শব্দ। সূফি বলল, ও!
এই ব্যাপার! এটাতো অনেক সোজা!
সবকিছুই একবার জেনে
গেলে সোজা লাগে, টুম্পা সূফিকে গম্ভীর ভাবে বলল। ওদের মন তারিদের এই গণিতের জাদুতে
অনেকটা ভালো হয়ে গেল।
ইতোমধ্যেই টুম্পার গল্প
শেষ, তারিদ আড্ডা জমাতে চলে এসেছে। কিন্তু তার নি:শব্দ পদাচারণায় কেউ বুঝতেই
পারেনি যে ও এসেছে। মনে হয় গল্পেই বেশি মনযোগ ছিল সবার তাই।
তারিদ বলে উঠল, কিরে কি
হচ্ছে? সবাই কি আমাকে নিয়ে আলোচনা করছিলি না নিজেরা আড্ডা দিচ্ছিলি?
সবাই চুপ। তারিদ নিজেই
বলে উঠল, তোদের আজ নতুন একটা চমক দেখাব?
না, আজ আর না। তারিদের
নতুন চমক কি সেটা জানার জন্য “খবর-দার” এর পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।
আর এই কৌশলটা সম্পর্কে
আরেকটু বলি, পৃষ্ঠা লাইন আর শব্দ বলার আগে তারিদ টুম্পার বলা উত্তর থেকে ২৫০ বিয়োগ
করে নিয়েছে কারণ পৃষ্ঠা সংখ্যার দশগুণের সাথে টুম্পাকে ২৫ যোগ করতে বলেছিল। যদি ৫০
যোগ করতে বলতো তাহলে বিয়োগ করতে হত ৫০০, যদি যোগ করতে বলতে ২০ তাহলে বিয়োগ করতে হত
২০০, এই রকম।