৩১ মে, ২০১০

চাঁদে পানির অস্তিত্ব




পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বা কোনদিন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে বহুকাল ধরে। আর চলছে সরাসরি অনুসন্ধান। মহাকাশের গভীরের নক্ষত্রের আশেপাশে নতুন গ্রহে খোঁজ পেলে অথবা ঘরের কাছে চাঁদ বা মঙ্গলে জলের সন্ধান চালানো হচ্ছে। কারণ যেখানেই জল, সেখানেই প্রাণের আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেখানেই থাকতে পারে আমাদের মত বা এমন উন্নত কোন প্রাণীর অস্তিত্ব। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এর অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের ১৮ জুন এলক্রস নামে একটি প্রকল্প শুরু করে। যা কক্ষপথ ধরে চাঁদ প্রদক্ষিণ করে দেখার জন্য “লুনার রিকোনেসেন্সে অর্বিটার” বা এলআরও নামে আরেক মহাকাশ যানের সাথে পাঠানো হয়।এলক্রস নামের এই অভিযানের আওতায় চাঁদের মধ্যে এক গহ্বরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বরফ পাওয়া গেছে। এর ফলে প্রাণের পাশাপাশি আরও অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। এই অভিযানে সেপ্টেম্বর মাসে দুটি মহাকাশ যান পাঠানো হয়। গত ৯ অক্টোবর ৯০০০ কিলোমিটার বেগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে কাবেয়াস নামের একটি খাদের কিনারে আছড়ে পড়ে একটি রকেট।



প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিটার গভীর ঐ খাদ। ঠিক ৪ মিনিট পর অপর রকেটটিও একই স্থানে আছড়ে পড়ে। রকেট আছড়ে পড়ার ফলে খাদের নীচ থেকে কোটি কোটি বছর ধরে অতল গহ্বরে জমে থাকা অনেক কিছুই উপরে ওঠে আসে। সেই খাদের নীচে প্রায় ২৪ গ্যালন জমাট বরফ পাওয়া গেছে। এই জলে বিষাক্র মেথানল রয়েছে। ফলে অপরিশোধিত অবস্থায় সেই জল পান করা যায় না। পান করলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। খাদের গভীরে জমে থাকা এবং উপরেরও অনেক স্তরে এই জল পাওয়া গেছে।এ বরফ জল প্রায় মাইনাস ২৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এটা একেবারে প্রাথমিক তথ্য। আরও অনুসন্ধান চালালে আরও নতুন নতুন বিষয় জানা যাবে।



এই চমকপ্রদ আবিস্কার পুরোপুরি অপ্রতাশিত নয়। এর আগেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে। বিশেষ করে চাঁদের দুই মেরু অঞ্চলে হাইড্রোজেন পর্যবেক্ষণ করে এই ধারণা আরো জোরালো হয়েছিল। তবে চমকপ্রদক এই আবিস্কারের ফলে মনে হচ্ছে সেই জলের পরিমাণ প্রতাশ্যার তুলনায় অনেক বেশিই। কিন্তু সেই জল চাঁদের বুকে কীভাবে আসতে পারে, সেই বিষয়ে নানারকম বির্তক রয়েছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, কোন এক ধূমকেতু হয়তো চাঁদের বুকে আঘাত হেনেছিল। সেই ধূমকেতুর মাথায় জমে থাকা জলই চাঁদে থেকে গেছে।এই ধরনের মহাকাশ অভিযান থেকে প্রাপ্ত মহামূল্যবান তথ্য সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করতে অনেক সময় লাগে। বিশেষ করে স্পেকটোমিটারের সাহায্যে প্রাপ্ত খনিজ পর্দাথ ও অন্যান্য বস্তু সম্পর্কে। তাই আমরাও অপেক্ষা করছি আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য।

এ লেখাটি খবর-দার জানুয়ারি ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে

নকল মেঘ


প্রশ্ন: নানা রকম মেঘ দেখা যায় আকাশে । কোনটা সাদা, কোনটা কালো, কোনটা জমাট, কোনটা আবার পেঁজো তুলোর মতো। সব মেঘই কি এক এবং এতে বৃষ্টি হয়?
উত্তর: বাতাসের মধ্যে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা জমাট বেঁধে বৃষ্টি নামে। আকাশের এই জমাট বাষ্পকেই মেঘ বলে। তবে সব মেঘেই বৃষ্টি হবার মত পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প থাকে না বা সব মেঘের নামও এক নয়। যেমন- যে মেঘে বৃষ্টি হয় না, তার নাম আবর্ত মেঘ। যে মেঘে বৃষ্টি হলেও হতে পারে তার নাম পুষ্কর মেঘ। যে মেঘ সচরাচর বৃষ্টি দেয় এবং সে বৃষ্টিতে ভালো
ফসল হয় তার নাম দ্রোহা মেঘ। যে মেঘে
প্রচন্ড বৃষ্টি হয় তার নাম সংবর্ত মেঘ। সন্ধ্যা বেলা যে মেঘ লাল দেখি তার নাম সিদুরে মেঘ। ঝড়ের পূর্বে যে ধূলো রঙের মেঘ দেখা যায় তার নাম ধূলি মেঘ। ঘন কালো মেঘের নাম বাদল মেঘ। শরতের রাতের আকাশে যে স্তরে স্তরে সাজানো মেঘ থাকে তার নাম স্তর মেঘ। গ্রীষ্মকালে ও বর্ষাকালে হাজার পাঁচেক ফুট উপরে আকাশের দিকে যে স্তুপকার মেঘ দেখা যায় তার নাম পুঞ্জ মেঘ। এই মেঘে বেশি জল জমে গেলে নেমে আসে বৃষ্টি হয়ে। তখন আবার এর নাম হয় কিউ মিউলো নিম্বাস মেঘ।
এই মেঘ মাটি থেকে পাঁচ ছয় মাইল উপরে থাকে। ভোর বেলায় বা বিকালে এই মেঘ দেখা যায় বড় বিচিত্র নকশায়। সেই নকশায় নানা জিনিস কল্পনা করা যায়। যেমন: উড়ন্ত হাঁস, পাখি, বিভিন্ন জীবজন্তু। অনেক উঁচুতে থাকে বলে এরা মিহি বরফ কণা নিয়ে দূর আকাশেই ভেসে বেড়ায়, মাটিতে নেমে আসে না। অর্থাৎ এই মেঘে বৃষ্টি হয় না।

তথ্যসূত্র: এ বুক অফ নলেজ
সামিয়া ইসলাম