১৭ আগ, ২০১২

গণিতের খুনসুটিঁ - পর্ব ০১




লেখক: মাসুদুর রহমান
-------------------------
হেয়ালি করতে ভালোবাসে তারিদ। তাতেও যেন মজা আছে,আছে শেখার অনেক কিছু। হঠাৎই সূফি বলে উঠল, যে তারিদের সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের মধ্যে একজন। সত্যতা স্বীকার করে টুম্পা বলে উঠলো,হ্যাঁ ঠিক তাই।

তারপর সেদিনের গল্পটা শুরু করল টুম্পা। সামনে উপষ্থিত অনেকেই।
একদিন টুম্পা ও সূফি কি নিয়ে যেন মন খারাপ করে বসে আছে? হঠাৎ ঘরে হেয়ালি গনিতজ্ঞ তারিদ ( বন্ধুরা দুষ্টুমি করে এই নাম দিয়েছে) প্রবেশ করেছে। নি:শব্দে ওদের ঐ অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিজে কি চিন্তা করতে করতে কিছুক্ষন পরে বলে উঠল,  পেয়েছি! ওদেরকে চমক ও গনিতের মজা দেখানোর রাস্তা দুইই পেয়েছি। সাতে মন ভালোর ব্যাপার তো আছেই। এতক্ষন সব ঠিকঠাকই ছিল সূফি ও টুম্পার দুজনের কেউই তখনও বুঝতে পারেনি যে তারিদ ঘরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারিদের উত্তেজনা তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি সামলে নিয়ে সূফি ও টুম্পাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তারিদ বলল,
-একটা বই ও পেন্সিল নিয়ে আয় দেখি।

সূফি চট করে ওর পদার্থবিজ্ঞান বইটা আর সেই সঙ্গে একটা পেন্সিল নিয়ে আসল।
তারিদ অনেকটা বিজ্ঞের মত পিছন দিক ফিরে চোখ বন্ধ করে বলল,
এই বইটার যেকোন পৃষ্ঠা খুলে সেই পৃষ্ঠার প্রথম দশ (১০) লাইনের মধ্যে যেকোন লাইনের কাছে ছোট করে একটা দাগ দে।

টুম্পা চটপট সূফির হাত থেকে বইটা নিয়ে একটি পৃষ্ঠা খুলে তারপর পেন্সিল দিয়ে তারিদের কথামত সেই পৃষ্ঠার দশ (১০) লাইনের মধ্যে একটা লাইন বেছে নিয়ে তার পাশে দাগ দিল।
তারিদ জিজ্ঞেস করল, হয়েছে?
টুম্পা বলল, হ্যাঁ হয়েছে।
-এবার যেই পৃষ্ঠা খুলেছিস সেই পৃষ্ঠার সংখ্যাকে দশগুণ করে তার সঙ্গে ২৫ যোগ কর।

অঙ্কে কাচা টুম্পা মনে মনে হিসেব করতে গিয়ে থেমে গেল। সূফি তখন মিটমিট করে হাসছিল। তারপর টুম্পা তাড়াতাড়ি একাট কাগজ নিয়ে তাতে খস খস করে হিসেবটা করে ফেলল। আর তারিদকে দেখিয়ে বলল হয়েছে।
-এখন যা হলো এর সঙ্গে এ পৃষ্ঠায় দাগ দেয়া লাইনের আগে যে কটা লাইন আছে সেই সংখ্যা যোগ দে।
-দিয়েছি।
-যা হলো তাকে দশ (১০) দিয়ে গুণ কর।
-করেছি।
-এবার ঐ দাগ দেওয়া লাইনের প্রথম দশটা শব্দের মধ্যে যেকোন একটা শব্দ বেছে নিয়ে তার নিচে দাগ দে। তারপর ঐ শব্দের আগে যে কটা শব্দ আছে সেই সংখ্যাটা গুণফলের সংগে যোগ দে।
-দিয়েছি।
-কত হল বল?
-৩৪৮৮।


তারিদ মনে মনে হিসেব কষে বলল,
তাহলে বত্রিশ পৃষ্ঠার চতুর্থ লাইনের পাশে দাগ দিয়েছিস। আর ঐ লাইনের নবম শব্দের নিচে দাগ দিয়েছিস।
সূফি সঙ্গে সঙ্গে টুম্পার হাতে ধরা বইটার উপর ঝুকে পড়ে দেখল তারিদ ঠিক বলল কিনা?
হ্যাঁ, তাইতো তারিদ একেবারে ঠিক ঠিক বলে দিয়েছে। কিন্তু কি করে বলল? পুরো ঘটনাটাকে সূফি ও টুম্পার স্বপ্নের মত মনে হল আর তারিদকে মন হল সেই স্বপ্নের জাদুকর বা রুপকার।

ওদের দুজনেরই দারুণ কৌতুহল। তারিদ কিভাবে করল এটা!! রহস্যটা কি জানতেই হয়?
কি আপনারও নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, কায়দাটা কি?

আচ্ছা, আবার তাহলে টুম্পার গল্পে ফিরে যাই।

এতক্ষন তারিদ কিছু বলার আগেই সূফি আর টুম্পা বলে উঠল, ঠিক ঠিক মিলে গেছে তারিদ। কিন্তু কেমন করে করলি তারিদ, আমাদের একটু শিখিয়ে দেনা।
ভাব নিয়ে অনেকটা জ্ঞানীর মত করে বলল, আমাকে যে উত্তরটা জানালি ৩৪৮৮, আমি তার থেকে আড়াইশো (২৫০) বিয়োগ করে বললাম ৩২৩৮। আর তা থেকেই কোন পৃষ্ঠার কোন লাইনের কোন শব্দ বলে দিতে পারলাম।

সূফি ও টুম্পা ব্যাপারটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করল। প্রথম দুই অংক মিলে বত্রিশ সেটাই পৃষ্ঠার নম্বর। তারপর আছে তিন, তিনের পরবর্তী সংখ্যা চার আর সেটাই লাইনের নম্বর। মানে চতুর্থ লাইন। একইভাবে  সবশেষের অংকটা থেকে কোন শব্দ সেটা পাওয়া গেল। আটের পরবর্তী সংখ্যা নয়, কাজেই নবম শব্দ। সূফি বলল, ও! এই ব্যাপার! এটাতো অনেক সোজা!
সবকিছুই একবার জেনে গেলে সোজা লাগে, টুম্পা সূফিকে গম্ভীর ভাবে বলল। ওদের মন তারিদের এই গণিতের জাদুতে অনেকটা ভালো হয়ে গেল।

ইতোমধ্যেই টুম্পার গল্প শেষ, তারিদ আড্ডা জমাতে চলে এসেছে। কিন্তু তার নি:শব্দ পদাচারণায় কেউ বুঝতেই পারেনি যে ও এসেছে। মনে হয় গল্পেই বেশি মনযোগ ছিল সবার তাই।
তারিদ বলে উঠল, কিরে কি হচ্ছে? সবাই কি আমাকে নিয়ে আলোচনা করছিলি না নিজেরা আড্ডা দিচ্ছিলি?
সবাই চুপ। তারিদ নিজেই বলে উঠল, তোদের আজ নতুন একটা চমক দেখাব?

না, আজ আর না। তারিদের নতুন চমক কি সেটা জানার জন্য খবর-দার এর পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।


আর এই কৌশলটা সম্পর্কে আরেকটু বলি, পৃষ্ঠা লাইন আর শব্দ বলার আগে তারিদ টুম্পার বলা উত্তর থেকে ২৫০ বিয়োগ করে নিয়েছে কারণ পৃষ্ঠা সংখ্যার দশগুণের সাথে টুম্পাকে ২৫ যোগ করতে বলেছিল। যদি ৫০ যোগ করতে বলতো তাহলে বিয়োগ করতে হত ৫০০, যদি যোগ করতে বলতে ২০ তাহলে বিয়োগ করতে হত ২০০, এই রকম।


গণিতের খুনসুটিঁ - পর্ব ০১


খবর-দার আগস্ট ২০১২ (বর্ষ: ৬ সংখ্যা: ১): কাভার পেজ এবং শেষ পৃষ্ঠা



১ জুন, ২০১০

টাওয়ার অব হ্যানয়



টাওয়ার অব হ্যানয়


এ লেখাটি জানুয়ারি ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে

ব্রহ্মাস্তুপ বা টাওয়ার অব হ্যানয় একটা মজার সমস্যা। সমস্যাটা একটা পৌরাণিক কাহিনীকে নিয়ে। পুরাণ মতে, বারানসীতে একটি মন্দির আছে। ব্রহ্মা (হিন্দু ধর্মমতে সৃষ্টিকর্তা) জগত সৃষ্টি কালে প্রথম এই মন্দিরটি তৈরি করেন, এতে ধাতব পাত্রে তিনটি হীরক দণ্ড স্থাপন করেন এবং প্রথম দন্ডে ৬৪টি সোনার চাকতি আছে। চাকতিগুলো এমন ভাবে রাখা ছিল যাতে বৃহত্তম চাকতিটি ছিল সবার নীচে এবং ক্ষুদ্রতম চাকতিটি সবার উপরে ছিল।



ব্রহ্মার নির্দেশে কর্মরত পুরোহিতগণ দিবারাত্র পরিশ্রম করে চাকতিগুলোকে এক দণ্ড হতে অন্য দণ্ডে স্থানান্তরিত করতে থাকবে। যতদিন না সবগুলো স্থানান্তরিত হয়, আর চাকতিগুলো এক দণ্ড হতে অন্য দণ্ডে সরানো মাত্রই ব্রহ্মার নির্দেশে সমস্ত জগত ধবংস হয়ে যাবে। কাজটি কম সময়ের মনে হলেও পুরোহিতগণ শেষ করতে পারছেন না। কারণ ব্রহ্মা তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন:

১. একবারে মাত্র ১ টি চাকতি স্থানান্তরিত করা যাবে।
২. কোন ছোট আকারের চাকতির উপর বড় আকারের চাকতি রাখা যাবে না।
৩. উপরের ২টি নিয়ম মেনে মাঝখানের দণ্ডটিকে সাময়িক ভাবে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু শেষে সব চাকতিগুলো অবশ্যই ৩য় দন্ডে আনতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে সাজাতে হবে।

এখন কথা হচ্ছে সবচেয়ে কম কত বার চাকতিগুলোকে স্থানান্তরিত করা যাবে এবং আনুমানিক কত সময় লাগবে। হিসাব করে দেখা যায় যে, যদি একটি চাকতি এক দণ্ড হতে অন্য দণ্ডে সরাতে এক সেকেন্ডও সময় লাগে তবে সবগুলো চাকতি সরাতে ৫৮৫ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন=১০০ কোটি বছর) বৎসর সময় লাগবে। কিন্তু বিশ্বব্রহ্মান্ডের বয়স ১৪ বিলিয়ন বৎসর। তবে আশা করা যায় ৫৮৫ বিলিয়ন বৎসরে বিশ্বব্রহ্মান্ড ধবংস না হলেও মন্দিরটি অবশ্যই ধবংস হয়ে যাবে। এই সমস্যাটি সমাধানের সত্যতানির্ণয়েজন্যআপনি নিজেও বাসায় পরীক্ষা করেদেখতে পারেন, তবে এ পরীক্ষা চাকতির বদলে ছোট-বড় মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি নিজেই দেখুন কত কম সময়ে আপনি এর সমাধান করতে পারেন।



তথ্যসূত্র : অঙ্ক কষে মজা
গ্রন্থনায় : মাসুদুর রহমান

৩১ মে, ২০১০

চাঁদে পানির অস্তিত্ব




পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বা কোনদিন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে বহুকাল ধরে। আর চলছে সরাসরি অনুসন্ধান। মহাকাশের গভীরের নক্ষত্রের আশেপাশে নতুন গ্রহে খোঁজ পেলে অথবা ঘরের কাছে চাঁদ বা মঙ্গলে জলের সন্ধান চালানো হচ্ছে। কারণ যেখানেই জল, সেখানেই প্রাণের আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেখানেই থাকতে পারে আমাদের মত বা এমন উন্নত কোন প্রাণীর অস্তিত্ব। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এর অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের ১৮ জুন এলক্রস নামে একটি প্রকল্প শুরু করে। যা কক্ষপথ ধরে চাঁদ প্রদক্ষিণ করে দেখার জন্য “লুনার রিকোনেসেন্সে অর্বিটার” বা এলআরও নামে আরেক মহাকাশ যানের সাথে পাঠানো হয়।এলক্রস নামের এই অভিযানের আওতায় চাঁদের মধ্যে এক গহ্বরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বরফ পাওয়া গেছে। এর ফলে প্রাণের পাশাপাশি আরও অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। এই অভিযানে সেপ্টেম্বর মাসে দুটি মহাকাশ যান পাঠানো হয়। গত ৯ অক্টোবর ৯০০০ কিলোমিটার বেগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে কাবেয়াস নামের একটি খাদের কিনারে আছড়ে পড়ে একটি রকেট।



প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিটার গভীর ঐ খাদ। ঠিক ৪ মিনিট পর অপর রকেটটিও একই স্থানে আছড়ে পড়ে। রকেট আছড়ে পড়ার ফলে খাদের নীচ থেকে কোটি কোটি বছর ধরে অতল গহ্বরে জমে থাকা অনেক কিছুই উপরে ওঠে আসে। সেই খাদের নীচে প্রায় ২৪ গ্যালন জমাট বরফ পাওয়া গেছে। এই জলে বিষাক্র মেথানল রয়েছে। ফলে অপরিশোধিত অবস্থায় সেই জল পান করা যায় না। পান করলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। খাদের গভীরে জমে থাকা এবং উপরেরও অনেক স্তরে এই জল পাওয়া গেছে।এ বরফ জল প্রায় মাইনাস ২৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এটা একেবারে প্রাথমিক তথ্য। আরও অনুসন্ধান চালালে আরও নতুন নতুন বিষয় জানা যাবে।



এই চমকপ্রদ আবিস্কার পুরোপুরি অপ্রতাশিত নয়। এর আগেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে। বিশেষ করে চাঁদের দুই মেরু অঞ্চলে হাইড্রোজেন পর্যবেক্ষণ করে এই ধারণা আরো জোরালো হয়েছিল। তবে চমকপ্রদক এই আবিস্কারের ফলে মনে হচ্ছে সেই জলের পরিমাণ প্রতাশ্যার তুলনায় অনেক বেশিই। কিন্তু সেই জল চাঁদের বুকে কীভাবে আসতে পারে, সেই বিষয়ে নানারকম বির্তক রয়েছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, কোন এক ধূমকেতু হয়তো চাঁদের বুকে আঘাত হেনেছিল। সেই ধূমকেতুর মাথায় জমে থাকা জলই চাঁদে থেকে গেছে।এই ধরনের মহাকাশ অভিযান থেকে প্রাপ্ত মহামূল্যবান তথ্য সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করতে অনেক সময় লাগে। বিশেষ করে স্পেকটোমিটারের সাহায্যে প্রাপ্ত খনিজ পর্দাথ ও অন্যান্য বস্তু সম্পর্কে। তাই আমরাও অপেক্ষা করছি আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য।

এ লেখাটি খবর-দার জানুয়ারি ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে